সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর রুপালি ইলিশ

 সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর রুপালি ইলিশ
 সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর রুপালি ইলিশ

সাইফুল ইসলাম, বাউফল(পটুয়াখালী):
দক্ষিণাঞ্চলের অর্থ উপার্জনের প্রধান উৎস হচ্ছে তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর রূপালী ইলিশ। এ দু নদীতে রূপালি ইলিশ ধরে হাজার হাজার জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতি বছর হাজার হাজার টন ইলিশ এ নদী থেকে বিদেশে যাচ্ছে। আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা।  সারা দেশের মতো তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর ইলিশ সংরক্ষনে প্রশাসন প্রতি বছর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। ওই সব নদীতে রূপালি ইলিশের বিচরণ। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। এ মাছের দেহ বেশ চাপা ও পুরু। মাথার উপরিতল পুরু ত্বকে ঢাকা। ধাতব রূপালি রঙ্গের শরীর সুবিন্যস্ত মাঝারী আকারে আশে আবৃত। দৈর্ঘ সবার্ধিক ৬০ সেমি:। বড় আকারের ইলিশের ওজন হয় প্রায় ২.৫ কিলোগ্রাম। স্ত্রী মাছ দ্রুত বাড়ে এবং সচরাচর পুরুষ ইলিশের চেয়ে আকারে বড় হয়। ইলিশ দক্ষ সাতারু। এ মাছ ১-২ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। নদীতে তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়,ঞ,রষরংযধ,ঞ.ঃড়ষর, ঞ.শবষবব এর মধ্যে রষরংযধ অধিক পরিমানে সংগৃহিত হয়। উপকূলীয় এলাকা আর অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর প্রায় ৩০ লাখ জেলে রূপালি ইলিশ সাথে জড়িত।

কৃষি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রধান কর্মকান্ড এবং জীবনীশক্তি। উৎপাদনশীলতা ও আয়বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির ভ’মিকা গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি সামাজিক কর্মকান্ডের এক বিশেষ ক্ষেত্র যা জনগনের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট। এ কৃষি উন্নয়নে সরকারি বেসরকারি রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ পরিবার কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে। তাই গ্রামাঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে চালচিত্র  হচ্ছে, সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর রুপালি ইলিশ।

একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্তি তথ্য হচ্ছে, দীর্ঘ খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে সাগরের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকায় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল গভীর সাগরে। উজানের ঢলের পানি ও গত কয়েক দিনের পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে লবণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসায় ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে উপকূলের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর দিকে ধেয়ে আসে। তেঁতুলিয়া লোহালিয়া নদীর পাড়ের হাজার হাজার জেলে ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নদীর ইলিশ মাছ সাথে তিন শ্রেণী পেশার লোক রয়েছে। তম্মেধ্যে জেলে, যারা সরাসরি নদী থেকে ইলিশ মাছ ধরে থাকেন। এ সব জেলের নৌকা ও জাল হচ্ছে প্রধান উপকরন। মধ্যবর্তী হচ্ছে মাছ ব্যবসায়ী। সরাসরি জেলে থেকে মাছ কিনে নিয়ে মাছের গদি বা মোকামে পাঠিয়ে থাকে। সরাসরি জেলে চেয়ে এ মছের ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হয়। মধ্যপর্যায় এ ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা থেকে আড়াাই লাখ টাকার পুজি নিয়ে থাকে। সাথে ১৫-২৫ হাজার টাকার মধ্যে একটি নৌকা রাখেন। কেননা, নৌকা নিয়ে তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর মধ্যে ঘুরে জেলেদের নিকট থেকে ইলিশ ক্রয় করেন। সর্বোচ্চ শ্রেণী হচ্ছে মাছের আড়ৎ দক্ষিণাঞ্চলের কুয়াকাটা মহিপুর ও পাথরকাটা মাছের আড়ৎ রয়েছে। এই সব আড়ৎদার মাছ ঢাকা কিংবা বরিশাল পাঠিয়ে থাকে। প্রতি বছর হাজার হাজার টন ইলিশ মাছ মোকামে পাঠিয়ে থাকে। পটুয়াখালীর জেলার উল্লেখ্যযোগ মাছের আড়ৎ হচ্ছে ৫ শতাধিক। এর মধ্যে মহিপুর ৭৫ টি, পাথরঘাটা ১০০ টি, পটুয়াখালী ৩৫ টি। এছাড়া কালাইয়া, দশমিনা, বগা, কালিশুরী গলাচিপা এলাকায় দু সহস্রাধিক মাছের গদি রয়েছে।

পটুয়াখালী মহিপুর এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর মতর এই বছরেও নদীতে ইলিশ পড়েছে। সেই সাথে বাড়ছে জেলে ও ব্যবসায়ী সংখ্যা। বাড়ছে মাছের আড়ৎ। মহিপুর বন্ধরের রুবেল মাছের আড়ৎ কুদ্দুছ মোল্লা কালবেলাকে জানান, বর্তমানে মাছের দর হচ্ছে, প্রতি মন ইলিশ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, মাঝারী ইলিশ ১২ হাজার টাকা এবং ছোট ইলিশ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ সব ইলিশ ঢাকা, পটুয়াখালী, বরিশালের বিভিন্ন মোকামে চালান হচ্ছে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারে বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। বার মাসই তেতুঁলিয়া ও লোহালিয়া ইলিশের প্রাচুর্য্য থাকে। এক সময় জেলেরা তেঁতুলিয়া থেকে নৌকাভর্তি ইলিশ আড়তে নিয়ে আাসেন। সরেজমিন চিত্রে গলাচিপা উপজেলার রাঙ্গাবালি একটি মাছের আড়ৎ প্রতিবেদকের এ দৃশ্য এখন পর্যন্ত চোখে পড়ে। নাজিরপুর ইউনিয়নের চরওযাডেল ও চরমিয়াজান এলাকায় দৈনিক গড়ে দুই শতাধিক নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরার জন্য তেঁতুলিয়া যাচ্ছেন। কালবেলার সাথে কথা হয়  জেলে জহির ফরাজী। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ইলিশ সাভার গড়েছে। সাভারের মধ্যে রয়েছে নৌকা ও জাল। একটি সাভারে কমপক্ষে ২- ৩ জন লোক থাকে। গড়ে প্রতিদিন ৭শ থেকে ১ হাজার টাকার ইলিশ মাছ ধরে থাকে। বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর জেলেদের ১০ দিন প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে। সম্প্রতি ১১ দিন ধরে বাউফল সংলগ্ন নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকার পর তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। মৌসুমের মাঝামাঝি এসে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেসহ মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাদের মুখে এখন বিরাজ করছে হাসির ঝিলিক।
বাউফলে মৎস্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দেশে ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে, যার মধ্যে চাষ করা মাছের উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন। জাটকা নিধন বন্ধের ফলে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন ৫২ হাজার মেট্রিক টন বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। ১০ বছরে বাংলাদেশি মানুষের মাছ খাওয়ার পরিমান দ্বিগুন হওয়ায় পাশাপাশি রপ্তানি বেড়েছে ১৩৫ গুন।

উপজেলা মৎস্য অফিসার জানান, দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে উপকুলীয় এলাকায় পটুয়াখালী জেলার তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর  ইলিশ এ অঞ্চলের মানুষের বড়ো সম্পদ। ইলিশ সম্পদ কে আরো বৃদ্ধি করতে হলে জাটকা ও মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকার বছরের নিধারিত সময় মা ইলিশ ধরা বন্ধ এবং বার মাসই জাটকা ধরা বন্ধ জন্য বিশেষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমাদের এ নিষেধাজ্ঞা মান্য করে ইলিশ সম্পদকে বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি ইলিশ ধরার সাথে জড়িত জেলেদের অধিকার সংরক্ষনে জেলে আইডি কার্ড এবং পূর্ণবাসন বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়েছে। জেলেদেরকে ভিজিএফ চাউল দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে এবং জেলে মৎসৗ সমিতিকে জলমহাল বন্দোবস্ত ব্যবস্থা করছে। সরকারের পাশাপাশি মানুষরে জন্য ফান্ডেশন সহযোগিতা কোডেক বাংলাদেশ জেলেদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন।